প্রয়াগরাজ কুম্ভমেলায় পদপিষ্টে মৃতদের পরিবার চার মাসেও পায়নি ক্ষতিপূরণ। এলাহাবাদ হাইকোর্ট বলল, সরকার বাধ্য আর্থিক সহায়তা দিতে।
রিপোর্টার: প্রলয় চ্যাটার্জী
সংবাদমাধ্যম: Channel 11 Digital Desk
চার মাস কেটে গেছে, কিন্তু এখনও কোনও ক্ষতিপূরণ পেলেন না প্রয়াগরাজ কুম্ভমেলায় পদপিষ্ট হয়ে মৃতদের পরিবার। ভয়াবহ সেই দুর্ঘটনায় নিহতদের স্বজনেরা আশায় ছিলেন প্রশাসনের ঘোষিত ২৫ লক্ষ টাকার আর্থিক সহায়তার। কিন্তু বাস্তবে মিলেছে শুধু প্রতিশ্রুতি। আর সেই প্রতিশ্রুতির ফাঁক ধরিয়ে দিল এলাহাবাদ হাইকোর্ট।
গত শুক্রবার এলাহাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি সৌমিত্র দয়াল সিং ও বিচারপতি সন্দীপ জৈনের বেঞ্চে এক মামলার শুনানি চলাকালীন স্পষ্ট ভাষায় জানানো হয়—সরকার ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করলে, তা যথাসময়ে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব সরকারেরই। আবেদন করেছে কি না, সেটা যুক্তি হতে পারে না।
কী হয়েছিল সেই দিন?
উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে বসেছিল পূর্ণকুম্ভ। লক্ষ লক্ষ মানুষ ত্রিবেণী সঙ্গমে পবিত্র স্নানের জন্য ভিড় করেছিলেন। কিন্তু সেই বিপুল জনসমাগম সামলাতে প্রস্তুত ছিল না প্রশাসন। এর ফল—পদপিষ্ট হয়ে প্রাণ হারান অন্তত ৩০ জন (সরকারি হিসাবে), কিন্তু স্থানীয় ও অসংখ্য পরিবারের দাবি, সংখ্যাটা আরও অনেক বেশি।
ময়নাতদন্ত ছাড়াই মৃতদেহ তুলে দেওয়া, অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা না থাকা, সামান্য নগদ ধরিয়ে দিয়ে দায় সারা—এইসব অভিযোগ উঠেছিল। ওই সময় রাজ্য সরকার প্রতিটি মৃতের পরিবারকে ₹২৫ লক্ষ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা করে।
বাস্তবে কী হল?
৪ মাস পার হয়ে গেলেও বিহারের উদয়প্রতাপ সিংয়ের স্ত্রী যিনি পদপিষ্ট হয়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন, তাঁর দেহের ময়নাতদন্ত পর্যন্ত হয়নি। ক্ষতিপূরণ তো দূরের কথা। তাই বাধ্য হয়েই আদালতের দ্বারস্থ হন তিনি।
আদালতের রায় ও প্রতিক্রিয়া:
সরকারি আইনজীবীর দাবি ছিল, পরিবার ক্ষতিপূরণের আবেদন করেনি। হাইকোর্ট সেই যুক্তিকে "অজুহাত" বলে উড়িয়ে দিয়েছে। আদালত স্পষ্ট জানিয়েছে—“এটা কি ভিক্ষা? স্বজন হারানো পরিবারকে কি সরকারের কাছে হাত পাততে হবে?”
বিচারপতিরা আরও বলেন, “সরকার যদি ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করে, তবে তা সম্মানের সঙ্গে পৌঁছে দেওয়াই কর্তব্য।”
আগামী পদক্ষেপ:
এই মামলার পরবর্তী শুনানি ১৮ জুলাই। তার আগে হাইকোর্ট রাজ্য সরকারকে হলফনামা আকারে জানাতে বলেছে—
কতজন মারা গেছেন?
কাদের দেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে?
কতজন পরিবার ক্ষতিপূরণের আবেদন করেছেন?
ক’জন পেয়েছেন আর্থিক সাহায্য?
আহতদের কী চিকিৎসা হয়েছে?
প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে:
সরকার কি মৃতের প্রকৃত সংখ্যা জানায়নি?
ক্ষতিপূরণের তালিকাও কি গোপন রাখা হয়েছে?
সব তথ্য প্রকাশ্যে এলে আরও বড় অস্বচ্ছতা ফাঁস হবে?
