কলকাতা–সল্টলেক–নিউ টাউন মাঝারি ভূমিকম্প ঝুঁকিতে! বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা



Channel Eleven| News Desk Report 

 মহানগরীর তিন গুরুত্বপূর্ণ নগরাঞ্চল ,  কলকাতা, সল্টলেক ও নিউ টাউন, এখন “মধ্যম মাত্রার ভূমিকম্প-প্রবণ অঞ্চল” হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। সাম্প্রতিক গবেষণা ও ভূতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের ভিত্তিতে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, এই অঞ্চলের ভূ-গঠন, মাটির প্রকৃতি ও নগরঘনত্ব ভবিষ্যতে উল্লেখযোগ্য ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন

আইজার ভোপালের স্ট্রাকচারাল জিওলজি বিভাগের ভূতত্ত্ববিদ ড. জ্যোতির্ময় মল্লিক জানিয়েছেন, কলকাতা ও আশপাশে নগরায়ণ দ্রুত বাড়লেও নীচের ভূ-স্তর স্থিতিশীল নয়। বিশেষ করে সল্টলেক ও নিউ টাউনের একটি বড় অংশ Seismic Zone-III অর্থাৎ “মাঝারি ঝুঁকি” অঞ্চলে পড়েছে। এই এলাকাগুলির নরম মাটি ও জলবহুল ভূস্তর ভূমিকম্পের সময় কম্পনকে বাড়িয়ে দিতে পারে।

 মাটির গঠন ও ঝুঁকি

গবেষণায় দেখা গেছে, দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকায় প্রায় ৭.৫ কিলোমিটার পুরু নরম পলি-মাটি রয়েছে যার নিচে রয়েছে শক্ত শিলা। ভূমিকম্প হলে এই নরম স্তর liquefaction প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তরল হতে পারে, ফলে ভবন ধ্বস, রাস্তার ক্ষতি বা অতিরিক্ত কম্পন ঘটার ঝুঁকি থাকে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, “হিঞ্জ জোন”, যেখানে একদিকে নরম পলি স্তর, অন্যদিকে কঠিন শিলা , এমন সংযোগস্থলে ভূমিকম্পের অভিঘাত বেশি হয়। কলকাতার পূর্বাঞ্চলের বহু অংশই এই ধরনের অঞ্চলে পড়ে।

নগর ঘনত্ব ও নির্মাণ-ঝুঁকি

সল্টলেক ও নিউ টাউন তুলনামূলক পরিকল্পিত শহর হলেও বহুতল ভবন দ্রুত বাড়ছে। বিশেষ করে নিউ টাউনের বিভিন্ন সেক্টরে ২০–৩০ তলা টাওয়ার নির্মাণ ক্রমেই ঘন হচ্ছে। অন্যদিকে কলকাতার পুরনো ঘিঞ্জি এলাকাগুলি বহু আগের নির্মাণ হওয়ায় ভূমিকম্পে ক্ষতির সম্ভাবনা অনেক বেশি বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

সরকারের সতর্কতা ও করণীয়

রাজ্যের ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট বিভাগ জানিয়েছে, ভূমিকম্প-প্রস্তুতি জোরদার করতে নাগরিকদের সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন। প্রশাসন ভবন নির্মাণে Building Code (IS-1893) কঠোরভাবে মানার নির্দেশ দিয়েছে।

অন্যদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন

নতুন নির্মাণের আগে মাটি পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা উচিত

বহুতল এলাকায় ভিত্তি-মজবুতি (foundation strengthening) নিশ্চিত করতে হবে

পুরনো ভবনগুলিতে স্ট্রাকচারাল অডিট করা প্রয়োজন

স্কুল, হাসপাতাল, মল—সব জনবহুল স্থাপনায় ভূমিকম্প-প্রস্তুতি অনুশীলন (drill) বাড়ানো উচিত

সাধারণ নাগরিকের করণীয়

বাড়িতে পরিবারকে “ড্রপ-কভার-হোল্ড” কৌশল শেখানো

টর্চ, ওষুধ, পানীয় জল, পাওয়ারব্যাঙ্কসহ জরুরি কিট রাখা

ভবন বা ফ্ল্যাট কেনার আগে স্ট্রাকচারাল সেফটি সার্টিফিকেট চাওয়া

খোলা জায়গা ও আশ্রয়স্থলের অবস্থান আগে থেকেই জেনে রাখা

গবেষণায় জানাগেছে,  ভূমিকম্পের সম্ভাবনা কম নয়, তবে এখনই আতঙ্কের কারণ নেই। সঠিক নগর পরিকল্পনা, নির্মাণ-নিয়ম মানা এবং সাধারণ মানুষের প্রস্তুতি থাকলে ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন