দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুকান্তপল্লিতে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার আর বার্ধক্যভাতা জমানো টাকা দিয়ে মহিলারা বসালেন সিসি ক্যামেরা। কিভাবে? জানুন সোনারপুরের সাহসী নারীশক্তির গল্প।
নিরাপদ-পরিচ্ছন্ন পাড়া লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকায়, সোনারপুরে নজির নারীব্রিগেডের
নিজস্ব প্রতিনিধি | দক্ষিণ ২৪ পরগনা
সুকান্তপল্লি, রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ড। কয়েক মাস আগেও এখানকার মহিলাদের রাস্তায় চলা দায় ছিল। কটূক্তি, উত্যক্ততা, মদ্যপদের উৎপাত—সব মিলিয়ে পাড়া মানে আতঙ্ক। কিন্তু এখন সেই চিত্রটাই বদলে গিয়েছে। বদলের কারিগর? এলাকার নারীব্রিগেড।
লক্ষ্মীর ভাণ্ডার থেকে সিসি ক্যামেরা
একদিন কয়েকজন গৃহবধূ মিলে সিদ্ধান্ত নিলেন—এভাবে আর চলবে না। আর্তনাদ নয়, এবার প্রতিক্রিয়া হবে। নিজেদের পাওয়া লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা ও বার্ধক্য ভাতার কিছু অংশ জমিয়ে সিদ্ধান্ত নিলেন পাড়ায় সিসি ক্যামেরা বসানো হবে।
দীর্ঘ তিন মাসের পরিকল্পনা, স্থানীয় কাউন্সিলার সন্দীপ নস্করের সঙ্গে আলোচনা এবং একের পর এক মহিলার উৎসাহে অবশেষে ১২টি আধুনিক সিসি ক্যামেরা বসানো হয় সুকান্তপল্লির অলিগলিতে।
নজরদারিতে নিরাপত্তা
পাড়ার একটি ঘরে তৈরি হয়েছে কন্ট্রোল রুম, যেখানে পালা করে মহিলারা বসেন ফুটেজ মনিটর করতে। প্রত্যেকের মোবাইলে রয়েছে ক্যামেরার লাইভ লিঙ্ক। কেউ না কেউ সর্বদা নজর রাখেন, কে ঢুকছে, কে বেরোচ্ছে।
দুষ্কৃতী, মদ্যপ—সবাই এখন সাবধান। আগের মতো পোষ্যকে অন্যের দরজায় শৌচকর্ম করানো বা গালিগালাজ করার প্রবণতা কমে গেছে। ক্যামেরার চোখ এখন সর্বত্র।
নারীর শক্তি বদলের মুখ
স্থানীয় বাসিন্দা জয়তী সাহা, গোপা চক্রবর্তী ও অনন্যা নন্দীরা বলেন, "আমরা ভাবলাম—লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা শুধু সংসারের জন্য নয়, নিজের পাড়ার সুরক্ষায়ও ব্যবহার করা যায়। সেই কাজটাই করলাম।"
তাঁদের মতে, "নিরাপত্তা পুলিসের দায়িত্ব ঠিকই, কিন্তু সচেতন নাগরিকরাও বড় ভূমিকা নিতে পারেন।"
নতুন বার্তা
এখন সুকান্তপল্লিতে ঢুকলেই দেখা যাবে সতর্ক বার্তা—‘আপনি সিসি ক্যামেরার নজরদারিতে রয়েছেন।’ এবং সেই বার্তা একটিই বোঝায়—এই পাড়া এখন নারীদের হাতে সুরক্ষিত।
